দুর্ভিক্ষ চিত্র ১৩
কোনো ব্যক্তি হয়ত খাবার মোড়া কাগজটি ফেলে দিয়েছে অথবা সামান্য খাবার কোনোভাবে লেগেছিল কাগজটিতে, কংকালসার পুরুষটি সেই কাগজটি থেকে চেটে চেটে সম্পুর্ণ খাবারটি সংগ্রহ করছে। বর্তমানে কেয়ার অফ ফুটপাথ প্রতীকী ব্যক্তিটি হয়ত ছিলেন গ্রামের কোনো কৃষক, মানব নির্মিত দুর্ভিক্ষের দৃশ্যত দলিল নির্মাণ করেছেন শিল্পী। প্রসঙ্গ জানাই শিল্পী জয়নুল আবেদিন এই চিত্রমালাগুলি কোনোদিন হাতছাড়া করেন নি, যাযাবরের মতন যেখানেই গেছেন সঙ্গে থেকেছে এই জীবন্ত দলিল।
সংগ্রাম (১৯৭৬)
শিল্পীকে হতে হয় উদার, নতুন কিছু গ্রহণের ক্ষমতা, নিজ সমাজ সংস্কার দর্শন সম্পর্কে সঠিক ধারণা। শিল্পী কখনই গজদন্ত মিনারে বসবাসকারী কাল্পনিক ব্যক্তি নন। মাটির গন্ধ না রইলে তো তাঁর সৃষ্টি বৃথা। এই প্রসঙ্গে একটি ছবির কথা বলতেই হয়। কাঠের গুড়ি বোঝাই একটি গরুরগাড়ী কাদায় আটকে গেছে। জোয়াল লাগানো বলদ দুটি এবং চালক আপ্রাণ চেষ্টা করছে গাড়িটিকে এমতা অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে। মানুষ এবং পশু উভয়ের পায়ের অনেকাংশই কাদায় ডুবে কিন্তু কেউই পরাজয় স্বীকার না করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে । ছবিটির উপযুক্ত শিরোনাম 'সংগ্রাম' ... মানবচেতনার জীবনবোধের দলিল। ছবিটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে পরবর্তীকালে জয়নুল এটিকে একাধিকবার পটে রূপ দেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল গড়া হয়েছিলো এই ছবিটির অনুলিপি দেখে, যা আমরা আমাদের ছোটবেলায় দেখেছিলাম। টেম্পারা ও তেলরঙ উভয় মাধ্যমেই ছবিটি আঁকা হয়েছিলো। জোরালো রেখাই ছিলো বলদদুটি এবং মানুষটির সংগ্রামের প্রতীকি টেনশন। টেম্পারায় কৃত ছবিটি ১৯৫৪ সালে আঁকা জয়নুল সংগ্রহশালায় এবং তেলরঙ কৃত ১৯৭৬ সালে আঁকা ছবিটি জাতীয় সংগ্রাহশালা(বাংলাদেশ), সংরক্ষিত আছে ।
0 comments:
Post a Comment