রুমানিয়ান কবি হান্না বোটা ( Hanna Bota)-র জন্ম ৭ই জুলাই ১৯৬৮, এযাবৎ অনুদিত হয়েছেন চারটি ভাষায় – হাঙ্গেরিয়ান,
ইংরেজি, স্লোভাক আর ফরাসিতে; আর সম্ভবত বাংলায় এই প্রথম। তার কবিতায় আমরা পাই কোন
এক হারানো পরিচয়ের অন্বেষণ, হারানো শুদ্ধতার প্রতি, আধ্যাত্মিকতার প্রতি এক তীব্র
আকর্ষণ...
কবিতা হয়তো ভাষাবদলে সেই কবিতা
থাকে না যা কবি রচেছিলেন, ভাষাবদলে হয়তো তৈরি হয় অন্য কবিতা; এখানে রইল সেরকমই আটটি
কবিতা,বাংলা তর্জমায়, এই আশায় – পাঠক হয়তো কিছুটা হলেও হান্নার
জগৎটাকে ছুঁতে পারবেন সোদরপ্রতিম এইসব কবিতায়...
– বিকাশ গণ চৌধুরী
|
Friday, July 31, 2015
রুমানিয়ান কবি হান্না বোটা-র কবিতা
অনুবাদ : বিকাশ
গণ চৌধুরী
রেখাচিত্র
কালোর ওপর সাদা – বরফ পড়ছে
কালোর ওপর ভেজাভেজা – বৃষ্টি
কালোর ওপর হলুদ – প্রজাপতি
কালোর ওপর কালো –আমরা দু’জন
খিল
আমি যা ছিলাম সেটাই এখনকার আমি
আর আমি কখনোই সেটাকে টপকাতে পারবো না :
আমার ত্রিমাত্রিক সময়
ঘনীভূত হয়ে আছে আমার অতীতে
যা আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছে না
আমি আমার ঘড়ির দিকে তাকাই – ঝড়ের মতো,
আমি গতকালের ঘড়ির দিকে তাকাই –
ঝরনার মতো
আগামীকালেরটা সাদা
তোমাদের জেলখানাগুলো অতোটা নির্দয় নয়
যতোটা আমার নিজস্ব বন্দীত্ব
ঈশ্বর
আমার খিল আঁটা দরজার সামনে
তুমিও শক্তিহীন
আমি খুঁজে চলেছি হারিয়ে যাওয়া একটা হুড়কো *
______________________________
*তোমার প্রান্তে
তোমার প্রান্তে থাকতে থাকতে
পিছনের দিকে
ঠিক এক পা সরে আসা দরকার
তবেই
তুমি তোমাকে ত্যাগ করবে
পাপ
অর্ধেক আলো
অর্ধেক বরফ
তুমি বাতাসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলে
ঝরে পড়ছিল
পিচ্ছিল ডিসেম্বরের
ঝোড়ো-ঝাপটা
পর্ণের ধার ঘেঁসে যাওয়া বেড়ালের মতো
তোমার পদক্ষেপ মেপে নিচ্ছিল রাস্তার কাদা
গোড়ালি অবধি
তারপর থাই অবধি
কখনও তারও ওপরে
এভাবেই দশকগুলো চলে যায়
অর্ধেক আলো
অর্ধেক বরফ
হৃদয়ের দিকে উঠে আসছিল কাদা
অস্ত্রোপচার
আমি জড়ো করেছি পৃথিবীর সমস্ত খঞ্জর
আমার ভালোবাসাকে কুচিকুচি করার জন্য
যা থেকে জেগে উঠবে শুধুই
আত্মত্যাগ জানার নিয়ম
কাটবো আমার আঙুল...
হৃদয়, থাই, চোখ ?
জানবো ভালোবাসার উৎস কোথায় ?
যদি শরীর থেকে আলাদা করে ফেলি প্রত্যেকটা কোষ,
প্রত্যেকটা স্পন্দন,
প্রত্যেকটা চাহনি
সবকিছুই তো ভালোবাসা
আর তাই পর্যাপ্ত খঞ্জর নেই
কামনা
আমাদের অভিসার জুড়ে আরও আরও
নীল
বিবিক্ততা চুরি করেছে তোমার মুখ
শুধু ভালোবাসার একটা ভঙ্গুর রেখাই আজ তরতাজা
আমরা দু’জন
একটা সাদা শীতের স্বপ্ন দেখি
যাতে ঝড়ের যাত্রাপথ জুড়ে
আমাদের পদচিহ্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়
কিন্তু সাদা হৃদয়টা থাকে।
সাদা নেকড়েরা সময়ের আগেই জন্মানো ভেড়াদের
ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করার জন্য দৌড়য়
রঙের জন্য, রক্তের ছিটের জন্য
খিদে গর্জন করে
সাদা মায়ার মধ্যে – আমরা দু’জন।
হিমশৈল
আমার শরীরের ওপরে
সদ্য রচা কবরে
ঠান্ডা হাতদুটো
নিস্ফল মিলন চায়
ভাবনারা কবরস্থ
ভালোবাসা বিবর্ণ,
অক্ষিপট জুড়ে
শোয়ানো জয়মালা
হিমশৈল গলতে অনেক দেরী হয়ে গেছে
পরিবর্তন
আমার শরীর
তোমার ব্যথায় হাতুড়ি ঠুকে ঢোকানো একটা পেরেক
যতক্ষণ না প্রবল বৃষ্টিপাতের মতো
তোমার রক্ত ফিন্কি দিয়ে বেরোচ্ছে
তোমাকে ক্রুশবিদ্ধ করে
আমি হয়ে উঠছি
একটা বিশাল পেরেক
আমার তীক্ষ্ণতাকে কেটে ফেল
কোমল করে তোল আমার বিদ্ধতা
আমার শরীর যেন
ক্রুশ না হয়,
পেরেকও না –
হয়ে উঠুক সন্তানের মুখ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
ঝকঝকে অনুবাদ, বেশ সাবলীল, সহজ সুন্দর ।
ReplyDeleteআনন্দ পেলাম।
ReplyDelete