Friday, July 31, 2015
এ মাসের কবি – অগাস্ট ২০১৫ – হাসনাত শোয়েব
হাসনাত শোয়েব। বাংলাদেশের তরুণ কবি হাসনাত আমাদের এ মাসের কবি। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে জন্ম হাসনাতের। সেখানেই বেড়ে উঠা। পড়তে পড়তে কবিতার জগতে আসা। ২০১২ সাল থেকে কবিতার পথে যাত্রা। তখন থেকেই বিভিন্ন ম্যাগ এবং ওয়েবে কবিতা
প্রকাশ। ২০১৫ সালে প্রথম কবিতার বই ‘সূর্যাস্তগামী মাছ’ প্রকাশিত হয় মেঘনাদ প্রকাশনী থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্র থেকে
স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত।
হাসনাত শোয়েব-এর কবিতা
অর্কেস্ট্রা
নার্সের শুশ্রূষায় ধুয়ে যাচ্ছে সারাদুপুর। উত্তরের জঙ্গলে বৃষ্টির সাথে নামছে সরীসৃপ। দেখো, আরো দূরে দেখো, সুউচ্চ মিনারের পাশে গর্ভবতী উট। তোমাদের জন্য রয়েছে মেদ ও মাংসের যুগলবন্ধী। তবুও কেউ জানে না অসুখের দিনে নার্সের ছদ্মনামগুলো। জ্বরের ঘোরে যেসব মাছ এখনো স্তনের হাড় খুঁজে বেড়ায়। তারা ক্রমশ শোকগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। হয়তো ফিরবে না মাংসের অর্কেস্ট্রা। জেনে গেছো, শুশ্রূষার অপেক্ষায় থাকা কুমারী সরীসৃপ।
মানিপ্ল্যান্ট সন্ধ্যা
অ্যালজাইমারে ছেয়ে গেছে গত দীর্ঘ বসন্তকাল। দূরবর্তী ট্রায়াল রুমের পাশে কেবল মানিপ্ল্যান্ট সন্ধ্যা। গুড আফটার নুন ম্যাজেস্টি, হত্যা মূলত দূর থেকে ভেসে আসা ফ্রান্স কাফকা। আপনি লিখুন, খাতার উপর বড় করে ‘এ ফর অ্যাপেল’। হায় ভুলে গেছেন, আপেল শিকারের মনোরম দৃশ্য! মানিপ্ল্যান্টের পাশে ফালি ফালি করে কাটা সন্ধ্যা।
তবে কেনো ট্রায়াল রুম জুড়ে কান্না আর কর্পূরের গন্ধ?
সফেদার উষ্ণ বুক
আকাঙ্ক্ষার গিমিক শেষ হয়ে এসেছে। শুভ্র সফেদার ভিতর থেকে পালিয়েছে আত্তারের তিতিরদল। তুমি কে যে খুঁজছ, ব্যথার অধিক প্রার্থনা। পাথর ঘসে ঘসে কেউ ঘাসের আয়না বানিয়ে নিয়েছে। নিজের মুখের কাছে ভেঙেচুড়ে গেছে দূরবীন। আর কোন তারবার্তা নেই। শুধুই একটা আয়না যেখানে কিছু পলাতক তিতিরের ছবি। আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষাসহ নত হয়ে বসি। সফেদার উষ্ণ বুক হয়তো ভুলে গেছে পশমের দাগ।
বিষাদের মর্সিয়া
হলুদ দুপুরে আফিমখোরদের জন্য ভালোবাসা। একটি খরগোশ হয়তো পেরিয়ে যাচ্ছে অশোকের জঙ্গল। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে তোমাদের ঘুম ভেঙে দিবে অপেরা হাউজ। তবুও বিষের পেয়ালা হাতে রঙ্গমঞ্চে রকস্টারের জন্য অপেক্ষা। সে আসবে শব্দের ক্যামোফ্লাজ নিয়ে। আরশে আজিম অপার করে গাইবে বিষাদের মর্সিয়া।
ঘূর্ণায়মান টারবাইন আর
চার্চবেল
বিস্কুটের উপত্যকা পেরিয়ে ফিরে
আসা। পাইনবনের আড়ালে কেবল ঘূর্ণায়মান টারবাইন আর চার্চবেল। সেক্সোফোন বাজিয়ে কেউ তোমাদের ডাকছে । সেইসব গোরখোদকেরা কই? যারা ম্যাপল পাতা দিয়ে মৃতদেহ সাজিয়ে রেখেছে। কফিনের গায়ে এঁকে দিয়েছে কালিঘাটের বিষণ্ন পট। এবার সময় হয়েছে ফিরে যাওয়ার। শেষবারের মতো বাজিয়ে নাও সেক্সোফোন। অতপর দীর্ঘ সময় ধরে চার্চবেল আর টারবাইনের প্রতিধ্বনি।
সহজ প্রার্থনা
স্বচ্ছ জলের কাছে শৃগালের সহজ
প্রার্থনা। মেনোপেজ পরবর্তী দুপুরের বিমর্ষতা বেড়ে যাচ্ছে। তোমরা কী
জানো, কেন্দ্রস্থিত মেঘ থেকে মৈথুনের দূরত্ব? সহসা একটি শামুক নিজ অক্ষের উপর ঘুরে এলো মাত্র। সেখানে
স্বচ্ছ জলের গায়ে জমছে স্ফটিক। এসবের মাঝেই শৃগালটি মেনোপেজ পরবর্তী যন্ত্রণা নিয়ে
মৈথুনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে।
শিরীষকুসুম জানে
তুমি জানো না, শিরীষকুসুম জানে
-একটি সাদা আতা ফল কেনো
আত্মজীবনী জুড়ে একা রয়ে গেছে
-জয়তুন নগরে পাখিদের
একান্ত আহার
-উৎসব শেষে অতিথিদের বাড়ি
ফেরার যন্ত্রণা
তুমি যা দেখো না, শিরীষকুসুম দেখে
-ইশকুলের অনুষ্ঠানে
চ্যাপলিনের একক সংগীত।
জোড়া ভ্রুতে নামে কাজল
ঘুম
আসন্ন ক্ষতদিনে জোড়া ভ্রুতে
নামে কাজল ঘুম। কেউ লিখে কেউ আঁকে। ব্ল্যাকবোর্ড ছিঁড়ে ফেলে রাতের হরিণেরা। কেউ ডাকে
সমুদ্রের অন্ধ চিতাবাঘ। কনক জানে হীরের নাকফুল কীভাবে অন্ধকারে জ্বলে ওঠে!
-আমি কী জানি, অনুবাদ গ্রন্থের বিষণ্ণতাসমূহ?
-তুই শুধু জানিস লবণ ও সমুদ্রের কোলাজে আছে
অনুবাদকের সুঘ্রাণ।
-তবে যেসব শিশুরা নামতা পড়তে পড়তে হতাশ হয়ে
পড়ে?
-হতাশা মূলত সুস্বাদু বাদামি চকলেট।
তবুও কী জানতে নেই অন্ধ চিতাবাঘের একাকী
শিকারের গোপনতা?
নরকে অনন্তকাল
ঘুমে মানুষের আয়ু কমে যায়। যেভাবে
হরিণীর পেট বেয়ে নেমে যায় রাত। স্থির হয়ে আটকে যাওয়া কোন ভোর দেখেছিস? আমি খুব ঘন মিশকালো ভোরের ভিতর আটকে পড়া হরিণীর যন্ত্রণা
দেখেছি। এসব কথা বলতে বলতে কনক থামল।
-আমি তোর কথার ভগ্নাংশটুকু বুঝিনা।
-কথা আসলে এক ধরনের যৌনতা যার আসলে কোন
কিছুই ঠিক বলে বুঝানো যায় না।
-আচ্ছা। মানুষ ছাড়া আর কেউ কি হাসে?
- মানুষ ছাড়া বাকি সবাই হাসে।
- তাহলে হাসির বয়স কত?
- মানুষের ওজনকে শিশুদের
হিংস্রতা দিয়ে গুণ করার পর যত হয় তত।
এসব প্রলাপ বান্ধব দিনের মধ্যেই যীশুকাল
চলে আসতো। আমি আর কনক নিজেদের বিষণ্ণতাকে যৌনতায় বদলে দেওয়ার কাজে
লেগে যেতাম। ক্যাম্পের ভিতর থেকে আটকে পড়া সব হরিণী একে একে বেরিয়ে
যেতো। আমরাও হাত-মুখ ধুয়ে নরকের দিকে চলে যেতাম। ছুটি যে খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়!
নির্লিপ্ত শাওয়ার
পাখিটি পয়ারে উড়ছে একা একা। তার ডানা
কেটে রাখি। তবুও উড়ছে একা একা।
পাখিটি তার স্তনের দিকে চেয়ে বলল- যেসব
ডাকঘর চিঠি নিয়ে আমার বুকের ওপর দিয়ে বারবার উড়ে যাচ্ছে, তারা কি জানে একখণ্ড শুভ্র বরফের যন্ত্রণা?
ধূমায়িত কাপ থেকে সরে যাচ্ছে তৃষ্ণার আবরণ। আমরা কেবলই
মধুফুলকে নগ্ন করে যাচ্ছি। অতপর গোসলের ঘরে নির্লিপ্ত শাওয়ার। কেউ ভায়োলিন হাতে একা একা সেরে নিচ্ছে গোসল।
সে তাহার পনিটেলের ওপর আঙুল রাখিয়া বলিল-
পাখিকে এইখানে শুইয়ে দাও, একা একা।
কেউ কেউ ঘুমের ভিতর শিখে নিতে পারে
ভায়োলিনবিদ্যা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteভালো লাগল হাসনাত এর কবিতা।
ReplyDeleteখুব তীক্ষ্ণ বোধি, উপমা প্রয়োগে নতুনত্ব আছে, বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ কথনসীমা । পড়তে পড়তে এক ঝলক আলো পেয়ে যাই । সম্ভাবনাময় কবি ।
ReplyDelete